পঞ্চ-মহাযজ্ঞ

।।ও৩ম্।।
বৈদিক পঞ্চ মহাযজ্ঞ
    ব্রহ্মযজ্ঞ-(অধ্যাপনং ব্রহ্ময়জ্ঞঃ। মনু০ ৩/৭০) বেদ শাস্ত্রের স্বাধ্যায় অন্যকে স্বাধ্যায় করানো, সন্ধ্যোপসনা করা ব্রহ্মযজ্ঞ বলে।
মিমীহি শ্লোকমাস্যে পর্জন্য ইব ততনঃ। গায় গায়ত্রমুক্থ্যম্।। (ঋ০ ১।৩৮।১৪)
    পদার্থঃ–হে বিদ্বান! (শ্লোকম্) বেদবাণীকে (আস্যে) নিজের মুখের ভিতর (মিমীহি) স্থাপন কর, আবার সেই বেদবাণীকে (পর্য়ন্যঃ ইব ততনঃ) মেঘ-বাদলের সমান গর্জন করিয়া দূর-দূর পর্যন্ত গম্ভীর স্বর দ্বারা প্রচার কর, তাঁহার উপদেশ সর্বত্র কর। (গায়ত্রম্) প্রাণের রক্ষাকারী (উক্থ্যম্) বেদ মন্ত্রকে (গায়) স্বয়ং গান কর, স্বয়ং স্বাধ্যায় কর আর অন্যকে করাও।।১৪।।
    ভাবার্থঃ–প্রস্তুত মন্ত্রে মনুষ্য মাত্রের জন্য কি সুন্দর শিক্ষার সমাবেশ দিয়াছেন। ১.প্রত্যেক মনুষ্যের বেদ-মন্ত্রের দ্বারা নিজের মুখ পূর্ণ  করা উচিত, মন্ত্রকে পড়া-পড়ানো এবং তাঁহা কন্ঠস্থ করা উচিত। ২.বেদ পড়িয়া যে জ্ঞানামৃত প্রাপ্ত হয় তাঁহাকে নিজের কাছেই সীমিত রাখা উচিত নহে, পরন্তু যে প্রকার বাদল সমূদ্র হইতে জল লইয়া তাঁহাকে গম্ভীর গর্জনের সহিত সর্বত্র বর্ষণ করেন সেই প্রকার মনুষ্যেরও বেদরূপী সমূদ্র হইতে রত্ন আর জ্ঞানের সঞ্চয় করিয়া তাঁহার লেখন আর বাণী দ্বারা প্রচার করা উচিত। ৩.বেদে আয়ু বৃদ্ধির, স্বাস্থ্য রক্ষার আর প্রাণশক্তিকে বলিষ্ঠ করিবার সহস্র মন্ত্র আছে। শরীর রক্ষার জন্য এই প্রকারের মন্ত্রকে স্বয়ং পড়া উচিত আর অন্যকে পড়ানো উচিত।।১৪।।

ভাষ্যঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী

সায়ংসায়ং গৃহপতির্নো অগ্নিঃ প্রাতঃপ্রাতঃ সৌমনসস্য দাতা।
বসোর্বসোর্বসুদান এনি বয়ং ত্বেন্ধানাস্তন্বং পুষেম।।৩।। (অথর্ব০ ১৯।৫৫।৩)
    পদার্থঃ (সায়ংসায়ম্) সায়ং-সন্ধ্যাবেলা (নঃ) আমাদের (গৃহপতিঃ) ঘরের রক্ষক আর (প্রাতঃ প্রাতঃ) প্রাতঃ-প্রভাতে (সৌম্যনসস্য) সুখ (দাতা) প্রদাতা (অগ্নিঃ) অগ্নি [জ্ঞানবান পরমেশ্বর বা বিদ্বান পুরুষ ও ভৌতিক অগ্নি] তুমি (বসোর্বসোঃ) উত্তম-উত্তম প্রকারে (বসুদানঃ) ধন দানকারী (এধি) হও। (ত্বা) তোমাকে প্রকাশিত করিয়ে (বয়ম্) আমরা মনুষ্য (তন্বম্) শরীরকে (পুষেম) পুষ্ট করি।।৩।।
    ভাবার্থঃ মনুষ্যের পরমেশ্বরের উপাসনা, বিদ্বানের সৎসঙ্গ আর অগ্নিহোত্রের অনুষ্ঠান দ্বারা স্বাস্থ্য উন্নতি করে ধনবৃদ্ধি করা উচিত।।৩।।

ভাষ্যঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী
গৃহপতির্নো অগ্নিঃ প্রাতঃপ্রাতঃ সৌমনসস্য দাতা।
বসোর্বসোর্বসুদান এনি বয়ং ত্বেন্ধানাস্তন্বং পুষেম।।৩।।
    পদার্থঃ (সায়ংসায়ম্) সায়ং-সন্ধ্যাবেলা (নঃ) আমাদের (গৃহপতিঃ) ঘরের রক্ষক আর (প্রাতঃ প্রাতঃ) প্রাতঃ-প্রভাতে (সৌম্যনসস্য) সুখ (দাতা) দানকারী (অগ্নিঃ) অগ্নি [জ্ঞানবান পরমেশ্বর বা বিদ্বান পুরুষ ও ভৌতিক অগ্নি] তুমি (বসোর্বসোঃ) উত্তম-উত্তম প্রকারে (বসুদানঃ) ধন দানকারী (এধি) হও। (ত্বা) তোমাকে প্রকাশিত করে (বয়ম্) আমরা মনুষ্য (তন্বম্) শরীরকে (পুষেম) পুষ্ট করি।।৩।।
    (প্রাতঃ প্রাতঃ) প্রাতঃ-প্রভাতে (নঃ) আমাদের (গৃহপতিঃ) ঘরের রক্ষক আর (সায়ং সায়ম্) সায়ং-সন্ধ্যাবেলাতে (সৌমনসস্য) সুখের (দাতা) দানকারী (অগ্নিঃ) অগ্নি [জ্ঞানবান পরমেশ্বর বা বিদ্বান পুরুষ ও ভৌতিক অগ্নি] তুমি (বসোর্বসোঃ) উত্তম-উত্তম প্রকারে (বসুদানঃ) ধন দানকারী (এধি) হও। (ত্বা) তোমাকে (ইন্ধানাঃ) প্রকাশিত করিয়ে (শতংহিমাঃ) শত শীতল ঋতুতে আমরা মনুষ্য (ঋন্ধানাঃ) উন্নতি করি।।৪।।
    ভাবার্থঃ মনুষ্যের পরমেশ্বরের উপাসনা, বিদ্বানের সৎসঙ্গ আর অগ্নিহোত্রের অনুষ্ঠান দ্বারা স্বাস্থ্য উন্নতি করে ধনবৃদ্ধি করা উচিত।।৩-৪।।
প্রাতঃপ্রাতর্গৃহপতির্নো অগ্নিঃ সায়ংসায়ং সৌমনসস্য দাতা।
বসোর্বসোর্বসুদান এধীন্ধানাস্ত্বা শতংহিমা ঋধেম।।৪।। (অথর্ব০ ১৯/৫৫/৪)
    পদার্থঃ (প্রাতঃ প্রাতঃ) প্রাতঃ-প্রভাতে (নঃ) আমাদের (গৃহপতিঃ) ঘরের রক্ষক আর (সায়ং সায়ম্) সায়ং-সন্ধ্যাবেলাতে (সৌমনসস্য) সুখের (দাতা) দানকারী (অগ্নিঃ) অগ্নি [জ্ঞানবান পরমেশ্বর বা বিদ্বান পুরুষ ও ভৌতিক অগ্নি] তুমি (বসোর্বসোঃ) উত্তম-উত্তম প্রকারে (বসুদানঃ) ধন প্রদাতা (এধি) হও। (ত্বা) তোমাকে (ইন্ধানাঃ) প্রকাশিত করিয়ে (শতংহিমাঃ) শত শীতল ঋতুতে আমরা মনুষ্য (ঋন্ধানাঃ) বিস্তার হতে থাকি।।৪।।
ভাবার্থঃ মনুষ্যের পরমেশ্বরের উপাসনা, বিদ্বানের সৎসঙ্গ আর অগ্নিহোত্রের অনুষ্ঠান দ্বারা স্বাস্থ্য উন্নতি করে ধনবৃদ্ধি করা উচিত।।৪।।

ভাষ্যঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী
সমিধাগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্বোধয়াতিথিম্।
অস্মিন্ হব্য জুহোতন।।১।। (যজুর্বেদ ৩/১)
    পদার্থঃ হে বিদ্বানগণ! তোমরা (সমিধা) যে জ্বালানি দ্বারা উত্তম প্রকার প্রকাশ হয়, ওই কাঠ-ঘী আদির দ্বারা (অগ্নিম্) ভৌতিক অগ্নিকে (বোধয়ত) উদ্দীপন অর্থাৎ প্রকাশিত করো তথা যেরূপ (অতিথিম্) অতিথিকে অর্থাৎ যাহার আসা-যাওয়া বা নিবাসের কোন দিন-সময় নেই, ওই সন্ন্যাসীর সেবন করায়, ঐরূপ অগ্নির (দুবস্যত) সেবন করাও আর (অস্মিন্) এই অগ্নিতে (হব্যা) সুগন্ধ কস্তুরী, কেসর আদি, মিষ্টি, গুড়, চিনি আদি পুষ্ট ঘী, দুধ আদি, রোগ নাশক সোমলতা আদি ওষধি, এই চার-প্রকারের সমগ্রতাকে (আজুহোতন) উত্তম প্রকার হবন করো।।১।।
    ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে বাচকলুপ্তোপমালংকার আছে। যেরূপ গৃহস্থ মনুষ্য আসন, অন্ন, জল, বস্ত্র আর প্রিয় বচন আদি দ্বারা উত্তম গুণবান সন্ন্যাসী আদির সেবন করায়, ঐরূপই বিদ্বান গণের যজ্ঞ, বেদী, কলাযন্ত্র আর যানে স্থাপন করো যথাযোগ্য জ্বালানী, ঘী, জলাদি দ্বারা অগ্নিকে প্রজ্বলিত করে বায়ু, বর্ষা জলের শুদ্ধি বা যানের রচনা নিত্য করা উচিত।।১।।

ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
উর্জং বহন্তীরমৃতং ঘৃতং পয়ঃ কীলালং পরিশ্রুতম্।
স্বধাস্থ তর্পয়ত মে পিতৃন্য।। (যুজুর্বেদ ২/৩৪)
    পদার্থঃ হে পুত্রাদি! তোমরা (মে) আমার (পিতৃন্) পূর্বোক্ত গুণযুক্ত পিতা-মাতার (ঊর্জম্) অনেক প্রকারের উত্তম-উত্তম রস (বহন্তীঃ) সুখ প্রাপ্তকারী স্বাদিষ্ট জল (অমৃতম্) সব রোগের দূর প্রদানকারী ওষধি মিষ্টাদি পদার্থ (পয়ঃ) দুধ (ঘৃতম্) ঘী (কীলালম্) উত্তম-উত্তম রীতি দ্বারা রন্ধন করা অন্ন তথা (পরিস্রুতম্) রসে রসালো ফল দিয়ে (তর্পয়ত) তৃপ্ত করো। এই প্রকার তুমি তাহাদিগের সেবন দ্বারা বিদ্যার প্রাপ্ত হয়ে (স্বধাঃ) পরধনকে ত্যাগ করে নিজের ধনের সেবনকারী (স্থ) হও।।
    ভাবার্থঃ ঈশ্বর আজ্ঞা দেন যে সব মনুষ্যের পুত্র আর চাকর আদির আজ্ঞা দিয়ে বলতে চায় যে তোমাদের আ পিতাদি অর্থাৎ পিতা-মাতা আদি বা বিদ্যা প্রদানকারীর প্রীতি দ্বারা সেবা করার যোগ্য। যেরূপ তোমাদিগের বাল্যাবস্থা বা বিদ্যাদানের সময় তোমাদের পালন করেছ, ঐরূপ তোমরাও তাহাদের সব সময়ে সৎকার করার যোগ্য, যাহা দিয়ে আমরা লোকের মধ্যে বিদ্যার নাশ আর কৃতজ্ঞতা আদি দোষ কখনো প্রাপ্ত না হই।।৩৪।।
ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
অশিতাবত্যতি থাবশ্নীয়াদ্যজ্ঞস্য সাkত্মত্বায়।
য়জ্ঞস্যাবিচ্ছেদায় তদ্ব্রতম্।।৮।।
এতদ্বা উ স্বাদীয়ো য়দধিগবং ক্ষীরং।
বা মাংসং বা তদেব নাশ্নীয়াত্।।৯।। (অথর্ব০ ৯/৬/৮-৯)
    পদার্থঃ (অতিথৌ অশিতবতি) অতিথির ভোজন করার পরে (অশ্নীয়াত্) সে [গৃহস্থ] আহার করবে, (য়জ্ঞস্য) যজ্ঞ [দেব পূজা, সঙ্গতিjরণ আর দান] এর (সাত্মত্বায়) অনুভূতির জন্য আর (য়জ্ঞস্য) যজ্ঞের (অবিচ্ছেদায়) নিরন্তর প্রবৃত্তির জন্য (তত্) সে (ব্রতম্) নিয়ম।।৮।।
    ভাবার্থঃ অতিথির সৎকার করাতে গৃহস্থর শুভকর্ম নির্বিঘ্ন হয়ে সদা চলতে থাকে।।৮।।
    পদার্থঃ (এতদ্ বৈ) ইহা (উ) নিশ্চয় করে (স্বাদীয়ঃ) অধিক উত্তম-স্বাদযুক্ত, (য়ত্) যে (তত্ এব) তাহাকেই (অধিগবম্) অধিকৃত জল, (বা) আর (ক্ষীরম্) দুধ (বা) আর (মাংসম্) মনন সাধক [বুদ্ধিবর্ধক] বস্তুকে (ন) এখন [অতিথির ভোজন করানোর পরে-ম০৮] (অশ্নীয়াত্) সে [গৃহস্থ] আহার করবে।।৯।।
    ভাবার্থঃ গৃহস্থের ইহাই সুখদায়ী হয় যে তিথির উত্তম-উত্তম রুচিকারক বুদ্ধিবর্ধক পদার্থ ফল, বাদাম, অক্ষোট আদি ভোজন করিয়ে আপনি ভোজন করবেন, যাহা থেকে সে সৎকৃত বিদ্বাস যথাবত উপদেশ করেন।।৯।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী
বলিবৈশ্বশ্বদেব যজ্ঞের বিধান-
বৈশ্বদেবস্য সিন্ধস্য গৃহ্যেহগ্নৌ বিধিপূর্বকম্।
আভ্যঃ কুর্য়াদ্দেতাভ্যো ব্রাহ্মনো হোমমন্বহম্।। (মনু০ ৩/৮৪)
    ব্রাহ্মণ অর্থাৎ প্রত্যেক দ্বিজ ব্যক্তি পাকশালার অগ্নিতে বিধিপূর্বক সিদ্ধ=তৈরী হয়ে বলিবৈশ্বদেব যজ্ঞের ভাগের ভোজনকে প্রতিদিন। এই দেবতাদের=ঈশ্বরীয় দিব্যগুণের চিন্তন পূর্বক আহুতি দিয়ে হবন করেন।

অহরহর্বলিমিত্তে হরন্তোহশ্বায়েব তিষ্ঠতে ঘাসমগ্নে।১। (অথর্ব০ (১৯/৫৫/৬)

রায়স্পোষেণ সমিষা মদন্তো মা তে অগ্নে প্রতিবেশা রিষাম।২। (অথর্ব০ (১৯/৫৫/১)

    পদার্থঃ (অহরহর্বলি) হে পরমেশ্বর! আপনার আজ্ঞায় যাহারা প্রতিদিন বলিবৈশ্বদেব যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, তাহারা (রায়ষ্পোষেণ) চক্রবর্ত্তী রাজ্যলক্ষ্মী ও ঘৃত, দুগ্ধাদি পুষ্টিকর পদার্থ প্রাপ্তি ও সম্যক শুভেচ্ছা দ্বারা, (মদন্তঃ) নিত্যানন্দ প্রাপ্ত হন, এবং মাতা, পিতা ও আচার্যদিগের প্রীতিপূর্বক উত্তমোত্তম পদার্থ দ্বারা নিত্য সেবা করেন। (অশ্বায়েব তিষ্ঠন্তে ঘাসম্) যেরূপ অশ্বের সম্মুখে তাহার ভক্ষ্য তৃণ, লতাদি এবং পানার্থ জলাদি প্রচুর পরিমাণে সংস্থাপিত হয়, সেই রূপ পিতা, মাতা ও আচার্যর সেবার জন্য বহুবিধ উত্তমোত্তম পদার্থ প্রদান পূর্বক তাহাদিগের প্রসন্নতা সম্পাদন করিবে। ।১।।
(মা তে অগ্নে প্রতিবেশরিসাম) হে পরম গুরু ঈশ্বর! আপনার আজ্ঞার বিরুদ্ধ ব্যবহারে আমরা যেন কদাপি প্রবৃত্ত না হই। অন্যায় পূর্বক আমরা যেন কদাচিৎ কোন প্রাণীকে পীড়া না দেই, পরন্তু সমস্ত জীবনমাত্রকে নিজ মিত্রবৎ ও আপনাকে সকলের মিত্রজ্ঞান করিয়া পরস্পরের উপকার সাধনে রত থাকি। ইহাই ঈশ্বর আজ্ঞা।।২।।
ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
।।বেদানুকূল পঞ্চমহাযজ্ঞ সমাপ্ত হল।।
।।ওম্ শান্তিঃ। শান্তিঃ।। শান্তিঃ।।

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.