বেদ মন্ত্রের,ঋষিরা কারা: একটি সমীক্ষা।

আমরা জানি,বেদ মন্ত্রের চারটে অংশ।

    যথা ঋষি, দেবতা,  ছন্দ ও স্বর। দেবতার অর্থ, বিষয় বা Subject।

    সমস্যা হয়, ঋষির অর্থ বুঝতে।

    কারণ, যাঁরা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ করেন, তাঁরা ভাবেন মন্ত্রের সাথে যে ঋষি আছেন তাঁরা মনুষ্য ঋষি এবং তাঁরাই মন্ত্রের রচনা করেছেন। অনেক মূর্খ বৈষ্ণব আবার ভাবেন, ব্যাসদেব বেদ রচনা করেছেন ও বেদ বিভাগ করেছেন।

    ঋষিরা কে এই বিষয়ে আলোচনার পূর্বে, কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক:

    বর্তমান সময়ে, ঋগ্বেদের চারটি শাখা পাওয়া যায়। যথা, আশ্বলায়ন, শাঙ্খায়ন, শাকল ও বাস্কল। আশ্বলায়ন, শাঙ্খায়ন, শাকল ও বাস্কল, মনুষ্য ঋষি ছিলেন এবং এনারাই শাখার সৃষ্টি কর্তা। অথচ, এনাদের নিজস্ব শাখাতেই, মন্ত্রের ঋষিদের তালিকাতে, এনাদের নাম নেই।

আবার দেখুন, শুক্ল যজুর্বেদের মাধ্যন্দিন শাখা যাজ্ঞবল্ক্যের নামে প্রসিদ্ধ। কিন্তু, যজুর্বেদের মন্ত্রের ঋষির তালিকাতে যাজ্ঞবল্ক্যের নাম পাওয়া যায় না।

দ্বাপর যুগের শেষে, সবচেয়ে বিখ্যাত ঋষি বোধহয় ব্যাসদেব। ব্যাসের নাম,চার বেদের, মন্ত্রের ঋষি তালিকায় কোত্থাও নেই। অর্থাৎ, মানুষ ঋষিরা বেদের জ্ঞাতা ছিলেন এবং তাঁরা মন্ত্রের অর্থ দর্শন করে শিষ্যদের শেখাতেন কিন্তু তাঁরা বেদ মন্ত্রের রচয়িতাও নন এবং বেদের মন্ত্রের সাথে যে ঋষির নাম পাওয়া যায় তাঁরা মানুষ ঋষি নন।

এখন আমি অতি সংক্ষেপে,বেদের মন্ত্রে, ঋষি বলতে সাধারণতঃ কি বোঝায় তা আলোচনা করছি:—— 

    প্রাণের নাম ঋষি (এই বিষয়ে প্রমাণ)

    প্রাণা ঋষয়ঃ। শতপথ ব্রাহ্মণ ৭.২.১.৫  প্রাণা বা ঋষয়েঃ। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৯.৩  প্রাণাঃ বৈ ঋষয়। বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২.২.৩ প্রাণা উ বাহঋষয়ঃ শতপথ ব্রাহ্মণ ৮.৪.১.৫ প্রাণ বাহ ঋষয়ঃ। শতপথ ব্রাহ্মণ ৬.১.১.১ ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২.২৭

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তাঁর রচিত ঋগ্বেদাদি ভাষ্য ভূমিকার চার নম্বর অধ্যায়ে ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২.৪ থেকে প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন-

    প্রাণা বা ঋষয়ো দৈব্যাসঃ। ব্যাখ্যা_জগতের কারণস্বরূপ প্রকৃতিতে যে প্রাণ বিদ্যমান আছে, সেই প্রাণকে প্রাচীন প্রাণ বলা হয় আর প্রকৃতির কার্যের মধ্যে যে প্রাণ বিদ্যমান আছে সেই প্রাণকে নবীন প্রাণ বলা হয়। এইজন্য বিদ্বানদের কর্তব্য এই যে, তাঁরা যেনো এই প্রাণদ্বয় বা ঋষিদ্বয়ের সাথে যোগ অভ্যাস করেন। •এছাড়াও, শতপথ ব্রাহ্মণের প্রমাণ অনুযায়ী,চোখকে জমদগ্নি ও প্রাণকে কশ্যপ বলে। •(বৃহদারণ্যক উপনিষদ 2.2.3 বলা হয়েছে, শরীরের একটি চোখের নাম বিশ্বামিত্র ও অপর চোখের নাম জমদগ্নি।)

ঐতরেয় আরণ্যক ২.২.১ এ বলা হয়েছে যে, বিশ্বামিত্র, বামদেব, অত্রি, ভরদ্বাজ, বসিষ্ঠ, প্রগাথ, গৃৎসামদ হলো, প্রাণের নাম।

    প্রাণো বৈ বসিষ্ঠ ঋষি। শতপথ ব্রাহ্মণ ৮.১.১.৬ অর্থাৎ বসিষ্ঠ ঋষি হলেন,প্রাণ। প্রাণ অঙ্গিরা ঋষি। শতপথ ব্রাহ্মণ ৬.১.২.২৮। অর্থাৎ অঙ্গিরা ঋষি হলেন প্রাণ।

এইবার দেখুন প্রাণকে রশ্মি বলা হয়েছে (রশ্মির অর্থ এইখানে তরঙ্গ।)

    প্রাণা রশ্ময়ঃ। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩.২.৫.২ ও ব্রহ্মসূত্র ১.৩.৩৯ অনুযায়ী  প্রাণা কম্পনাৎ। অর্থাৎ প্রাণ হলো, কম্পন।

তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে বেদ মন্ত্রের সাথে উল্লেখিত ঋষিরা মানুষ নন। এই ঋষিরা হলেন প্রাণ তরঙ্গ বা প্রাণ রশ্মি। প্রাণের তরঙ্গ আকারে, প্রবাহিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন বল বা force। বল বা force এর সাহায্যে, গতির সৃষ্টি হয়। এখন বল বা force সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হয়, কম্পনের।

প্রলয়ের পর, যখন নতুন সৃষ্টি হয়, তখন এই বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিরা,ঈশ্বরের প্রেরণায় সৃষ্টি কার্যে অংশ গ্ৰহণ করে, অর্থাৎ ঈশ্বর কম্পনের সৃষ্টি করেন। কম্পনের ফলে,বল বা force উৎপন্ন হয়। এই বল বা force, প্রাণ রশ্মিগুলোকে গতিশীল হতে সাহায্য করে। তারপর,বিভিন্ন পদার্থ, এই প্রাণ রশ্মিদের দ্বারা উৎপন্ন হয়। (লাউড স্পিকার জোরে চালিয়ে স্পিকারের উপর হাত দিলে কম্পন অনুভব হয়।যত জোরে আওয়াজ সৃষ্টি করা হয়,তত বেশি কম্পন হয়। অর্থাৎ, আওয়াজ দূরবর্তী স্থানে যাওয়া বা প্রবাহিত হওয়ার জন্য কম্পনের প্রয়োজন হয়। কারণ কম্পন, বল বা force উৎপাদন করে।এই বল বা force শব্দ তরঙ্গকে ঠেলে বা গতি দেয় দূরে যাওয়ার জন্য।)

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.