সৃষ্টির আদি পোষাক সভ্যতা

নারীর পোষাক সভ্যতা
অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।
মা তে কাশপ্লকৌ বৃশান্ স্ত্রী হি ব্রহ্মা বভূবিথ।। ১৯।।
(ঋ০ ৮.৩৩.১৯)

    পদার্থঃ হে নারী! (অধঃ পশ্যস্ব) নিচে দেখ (মা উপরি) উপরে দেখ না। (পাদকৌ সন্তরাং হর) দুই পাকে ঠিক প্রকারে একত্র করে রাখ। (তে কশপ্লকৌ) তোমার গোপানঙ্গ-দুই স্তন, পীঠ আর পেট, দুই নিতম্ব, দুই জঙ্ঘা, দুই কনুই আর দুই গোড়ালি (মা দৃশন্) প্রদর্শন করবে না। এই সব-কিছু কি জন্যে? (হি) কেননা (স্ত্রী) স্ত্রী (ব্রহ্মা) ব্রহ্মা, নির্মাণকর্ত্রী (বভূবিথ) হয়ে থাকে।। ১৯।।

    ভাবার্থঃ মন্ত্রে নারীর শালীনতার যথেষ্ট সুন্দর চিত্রণ করেছেন। প্রত্যেক স্ত্রীর এই গুণ গুলো নিজের জীবনে ধারণ করা উচিত।
    ১. স্ত্রীকে নিজের দৃষ্টি সদা নীচে রাখা উচিত, উপরে নয়। নিচে দৃষ্টি রাখা লজ্জা আর শালীনতার চিহ্ন।   উপরে দেখা নির্লজ্জতা আর অশালীনতার দ্যোতক।
    ২. স্ত্রীর চলার সময় দুই পাকে মিলিয়ে যথার্থ সাবধানে অগ্রসর হওয়া উচিত। হেলে দুলে, হাব-ভাবের  প্রদর্শন করে, চঞ্চালতা আর অস্থিরতা দ্বারা চলা উচিত নয়।
    ৩. নারিদের বস্ত্র এই প্রকার ধারণ করা উচিত যাতে তাহাদের গুপ্ত-অঙ্গ-স্তন, পেট, পীঠ, জঙ্ঘা, কনুই আদি প্রদর্শন না হয়। নিজের অঙ্গের প্রদর্শন করা বিলাশিতা আর লম্পটতার দ্যোতক।

    ৪. নারীর জন্য এমন বন্ধন কেন?  এমন কঠোর সাধনা কি জন্য? এইজন্য যে নারী ব্রহ্মা, সে জীবন-নির্মাত্রী আর সৃজনকর্ত্রী। যদি নারীই পথভ্রষ্ট হয়ে যায় তখন সৃষ্টিও পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। মাতা আর বনেরা  ! নিজের অঙ্গের প্রদর্শন করবে না।

যেরূপ উত্তম ফলের জন্য উত্তম বীজের  চয়ন করতে হয় , কেননা যদি বীজই নিকৃষ্ট, হীনবীর্য, দোষ যুক্ত হয় তবে উৎপন্ন উৎকৃষ্ট হয় না। ঐরূপই স্ত্রী যদি সংযমী,  লজ্জাগুণশালী, গম্ভীর, শালীন, পুরুষার্থী, ত্যাগী, তপস্বী হয়, চরিত্রবান হয় তখন সন্তানও ঐরূপই হয়।

আজ উচ্ছৃঙ্খল, স্বচ্ছন্দী, লম্পট, অলস, প্রমাদী, কামুক, ক্রোধী সন্তানের মূখ্য কারণ মা-ই হয়। মায়ের পদবী কেবল বাচ্চার উৎপন্ন করাতে অথবা তাহাদিগের রুটি খাওয়াতে অথবা লাল, নীল, হলুদ কাপর পরিধানের জন্য হয় না। মা, মা তখনই হয় যখন সে বাচ্চাকে চরিত্রবান, রাষ্ট্র ভক্ত, ঈশ্বর বিশ্বাসী, সমাজ সেবা বানিয়ে। এই সবই  হওয়া উচিত যখন সে স্বয়ং এই গুণের দ্বারা যুক্ত থাকে।

আজ সমাজে যে স্ত্রীদের সাথে উত্তক্ত, খারাপ দুষ্ট কৌশল, দুরাচার, বলাৎকার আদির ঘটনা বানিয়ে যায়, ইহাতে স্ত্রীরাও কারণ। তাহারা যদি উত্তম অরঞ্জিত বস্ত্র পরিধান করত, নিজের স্তন, নিতম্ব আদি কামোক্তজনক অঙ্গের প্রদর্শন না করত, নিজের চোখ নিচের দিকে রেখে, সোজা রাস্তাতে চলত  তখন দুষ্টের সাহস হতো না যে তাহার উত্তক্ত করা। যখন স্ত্রীরা স্বয়ংই ঢঙ্গ করে, রঙ্গ-তামাসা, চুছ বস্ত্রকে পরিধান করে, হেলে-দুলে, আকর্ণ শ্রৃঙ্গার করে ঘর থেকে বাহিরে যায়, বাজারে কেনাকাটা করে তখন ঐ দুরাত্মার ইহার দুরাচার করার সাহস হয়। যদি ঐরকম না করত। স্তন, নিতম্ব আদি গোপানঙ্গের প্রদর্শন করা লম্পটতা, এই লম্পটতার প্রদর্শন দর্শনকারীর মনে বিষয়াক্তি উৎপন্ন হয় আর বিষয়াক্ত ব্যক্তিই ব্যভিচারী, দুরাচারী হওয়া প্রয়াস করেন আর যে সমাজে দুরাচার, ব্যভিচার, অনাচার বিস্তার হয় সেই সমাজে শৌর্য, পরাক্রম, উৎসাহ, আদর্শ পরম্পরার বিনাশ হয়ে যায়।

    বিশ্বের এক বহুত বড় সমস্যা যে বাচ্চা খারাপ হয়ে যায়। সকলেই বরে থাকেন যে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৈদিক জীবন পদ্ধত্তি দ্বারা পরীক্ষা করা যায় তো এই নিষ্কর্ষ নিবারণে বাচ্চা নষ্ট হতো না, বিগড়ে যাওয়া আর বিগড়ানোকারীর মধ্যে মা-র নাম শীর্ষস্থ হত। স্ত্রী নতুন সন্তানের জননীই নয় পরন্তু জীবন নির্মাত্রীও  হয় এজন্য বেদে ব্রহ্মা শব্দ প্রয়োগ করেছে।                                                                                                                                                                   ভাষ্যঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী

নারী-পুরুষের পোষাক সভ্যতা
য়ত্তে বাসঃ পরিধানং য়াং নীবিং কৃণুষে ত্বম্।
শিবং তে তন্বে৩ তত্কৃণ্মঃ সংস্পর্শেহদ্রূক্ষ্ণমস্তু তে।। 
(অথর্ব০ ৮/২/১৬)
    পদার্থঃ হে মনুষ্য! (তে) তোমার  (য়ত্) যে (পরিধানম্) শরীরকে আচ্ছাদনের জন্য (বাসঃ) কাপড় আছে আর (য়াম্) যে বস্ত্রকে (ত্বম্) তোমরা (নীবিম্) কোমরের নীচে ধুতি, গুহ্যদেশ আদির রূপে (কৃণুষে) ধারণ করে আমরা (তত্) ওই বস্ত্রকে (তে তন্বে) তোমার শরীরের জন্য (শিবম্) সুখকারী (কৃণ্মঃ) তৈরী করো, যাহাতে সে বস্ত্র (তে) তোমার জন্য (সংস্পর্শে) স্পর্শে (অদ্রূক্ষ্ণম্) অমসৃণ-খসখসে, শুষ্ক আর খারাপ না হয়ে কোমল আর মুলায়ম (অস্তু) হবে।।১৬।।
    ভাবার্থঃ মনুষ্য দেহের আচ্ছাদন বস্ত্র, অঙ্গরক্ষা আদি বস্ত্র শরীরের জন্য সুখদায়ক বানাবে।।১৬।।
বৈদিক সভ্যতা আর সংস্কৃতি সর্বপ্রাচীন। মনুশ্যের জ্হান আর বিজ্ঞানের শিক্ষা বেদের দ্বারাই প্রাপ্ত হয়েছে। তাহার সভ্যতা আর সংস্কৃতির প্রথম পাঠ বেদ দ্বারাই শিখেছে। মনুষ্য অস্ত্র-শস্ত্র আর নানা প্রকারের যান আর যন্ত্রের নির্মাণ করা বেদ দ্বারাই শিখেছে। যে সময় ইংল্যাণ্ড আর আমেরিকার নিবাসী অসভ্য আর জঙ্গলী ছিল ওই সময় ভারতবর্ষ জ্ঞান আর বিজ্ঞানে অনেক আগে মহান ছিল। মহাভারতের যুদ্ধ থেকে ভারতের এমন ধাক্কা লিগেছিল যে সে এখনো পর্যন্তও সবল হয়নি। প্রস্তুত মন্ত্রে কোমল আর সুখ স্পর্শ বস্ত্র তৈরীর বর্ণন অত্যন্ত স্পষ্ট। মনুষ্য দুই প্রকারের বস্ত্র পরিধান করেন-কমর থেকে উপরে, দ্বিতীয় কোমর-প্রদেশ থেকে নিচে। এই উভয় প্রকারের বস্ত্র এমন প্রকারের হবে  যা শরীরের সুখ প্রদানকারী হবে। যে শরীরে অসজ্যকারী না হবে। সুখ প্রদানকারী বস্ত্র এমনই হবে যাহা গরম আর ঠান্ডায় আমাদের রক্সা করতে পারে আর কোমল তথা মুলায়ম হবে।।১৬।।
                                                                            ভাষ্যঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী ও পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী
।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.