বাণীর বিচার

    বিদ্বানেরা বাণীর চার রূপ মান্য করেন ঋগ্বেদে-১/১৬৫/৪৫

    এর ভাষ্যে মহর্ষি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী’র চার প্রকারের বাণী বৈয়াকরণের দৃষ্টিতে  নাম, আখ্যান, উপসর্গ এবং নিপাতের রূপে বর্গীকৃত হয়। আচার্য সায়ণ ইহার ভাষ্যে বাণীর বর্গীকরণ বৈয়াকরণের দৃষ্টির অতিরিক্ত নৈরুক্ত আদির দৃষ্টিকে নিয়েও করা হয়েছে। ইহাতে এক বর্গীকরণ আছে- পরা
    চত্বারি বাক্ পরিমিতা পদানি তানি বিদুর্ব্রাহ্মণা য়ে মনীষিণঃ। গুহা ত্রীণি নিহিতা নেঙ্গযন্তি তুরীয়ং বাচো মনুষ্যা বদন্তি।। (ঋক ১/১৬৪/৪৫)
    পদার্থঃ (য়ে) যে (মনীষিণঃ) মনকে গতিরোধকারী (ব্রাহ্মণাঃ) ব্যাকরণ, বেদ আর ঈশ্বরকে জ্ঞাতবান বিদ্বান জন (বাক্) 
বাণীকে (পরিমিতা) পরিমাণ যুক্ত  যে (চত্বারি) নাম, আখ্যাত, উপসর্গ আর নিপাত চার (পদানি) জানার যোগ্য পদ আছে
(তানি) তাহাকে (বিদুঃ) জানেন, তাহার মধ্যে থেকে (ত্রীণি) তিন (গুহা) বুদ্ধিতে (নিহিতা) ধরার (ন ইঙ্গয়ন্তি) চেষ্টা করে
না। যে (মনুষ্যাঃ) সাধারণ মনুষ্য আছে, তাঁহারা  (বাচঃ) বাণীকে (তুরীয়ম্) চতুর্থ ভাগ অর্থাৎ নিপাত মাত্রকে  (বদন্তি) বলা হয়।।৪৫।।
    ভাবার্থঃ বাক্ রশ্মি চার প্রকার। তথা সাইন্ড চার প্রকার। ১>পরা, ২>পশ্যন্তি, ৩>মধ্যমা, ৪>বৈখরী। ইহার মধ্য একটি বাক্ মনুষ্য জানে যটি বৈখরী আর তিনটি সাধারণ মনুষ্য জানে না। এই তিন বানী হৃদয় গুহা বা আকাশে বা প্রকৃতিরূপ গুহায় প্রতিষ্ঠিত আছে। বিদুষী পন্ডিত উচ্চকোটির যোগীগণ তাহাকে জানেন। বা বিদ্বানগণ তাহাকে জানেন।।৪৫।।

বানীর চার রূপ।
[১>পরা ২>পশ্যন্তি ৩>মধ্যমা ৪>বৈখরী]

    বৈখরী বানী।

    বৈখরী শব্দকে উৎপন্ন করে। বৈখরী কন্ঠ থেকে উৎপন্ন হয়। অথবা কোন পদার্থ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এটি স্থূল বানী। এই বানী বক্তা ও শ্রতার নিকট গমন করে। কান পর্যন্ত গমন করে সমাপ্ত হয়। বৈখরী বানী বায়ুর কম্পন দ্বারা কান পর্যন্ত পৌছায়।

  মধ্যমা

    বৈখরী বানী যখন কানকে স্পর্শ করে তখন বৈখরী বানী ইলেকট্রিক সিগনালে কনভার্ট হয়ে কর্ণ তন্ত্র দ্বারা ব্রেন পর্যন্ত পৌছায়। এই বানী বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রূপে গমন করে থাকে। এই বানীকে মানুষ শ্রবন করে মন দ্বারা জানতে পারে। কিন্তু সূর্য অাদি রশ্মি বা বিদ্যুৎ সিগনাল কর্নের সাথে সম্বন্ধ না থাকায় মানুষ তাহাকে বুঝতে পারে না। এই মধ্যমা বানী বৈখরী হতে স্থূল। মানুষ এই বানীকে শ্রবন করতে পারে যাহা বৈখরী হতে জাত হয়।

    পশ্যন্তি বানী

    পশ্যন্তী বাক্ মনের মাঝে উৎপন্ন হয়।  এক মন যাহা আমাদের অধীন অপর এক মন যাহা সর্বত্র  সৃষ্টি ব্যাপ্ত। মন এই পশ্যন্তী বানী বুঝতে পারে। মনস্তত্ব দ্বারা এই বানী সৃষ্টি হয়। জীবাত্মা মনস্তত্বে এই বানী বুঝে থাকে। পশ্যন্তী বানীকে যোগী বুঝতে পারে এবং দর্শন করতে যারে।

    পরা বানী।

    এটি এমন এক বানী যেটি সর্বাপেক্ষা সূক্ষ। পরা অবস্থায় শব্দ অব্যক্ত ব্যবস্থায় বিদ্যমান থাকে। পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। ওম্ রূপ পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। বাকি অন্য সকল বানী মহতত্বে উৎপন্ন হয়ে থাকে। পরা বানী প্রকৃতির সহিত সর্বদা বিদ্যমান অাছে। সৃষ্টির সময় এই বানী প্রকৃতির মাঝে প্রথম কার্য করে থাকে।  সর্বপ্রথম হালচাল পরা বানী কতৃক হয়ে থাকে। পরা বানীর প্রভাবে সৃষ্টি হয় মহতত্ব। মহতত্বের মাঝে পরা বানীর প্রভাবে সৃষ্টি হয় পশ্যন্তী বানী।

বানীর সৃষ্টি ক্রম।
[বৈখরী>পশ্যন্তি>মধ্যমা>পরা]

    পরা বাক্ সর্বপেক্ষা সূক্ষ। এই সূক্ষ বাক্ রশ্মি হতে বাকি তিন বাক্ রশ্মি উৎপন্ন হয়ে থাকে। বাকি তিন রশ্মির জননী ও বলা হয় পরা বানীকে। সৃষ্টি নির্মানে বানী সমুহের প্রত্যক্ষ অবদান। বানী ছাড়া সৃষ্টির নির্মান থাকে না। কোন পদার্থ থাকলে তার শব্দ ও আছে।
    শব্দ পূর্বরূপ পদার্থ উত্তর রূপ। বেদ সমুহ নাম রূপ। তথা শব্দরূপ। প্রথম সব নাম্ রূপ ছিল। নাম্ হতে স্থূল জগতের উৎপত্তি। বানী বিজ্ঞান তাহার প্রমান।
।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.