বেদ মন্ত্র হলো সূক্ষ্ম পদার্থ ও মানব ঋষিগণ বেদ মন্ত্র কান দিয়ে শ্রবন আর চক্ষু দ্বারা দর্শন করেছিল

বেদ মন্ত্র হলো সূক্ষ্ম পদার্থ।
যা দেখাও যায় এবং কানেও শোনা যায়।

    নিরুক্ত ২.১১  অনুযায়ী ঋষিদের মন্ত্র দর্শন হয়।

    ঋগ্বেদ ১০.৭১.৩ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, ঋষিগণ বাককে প্রাপ্ত হয়েছেন অর্থাৎ বাক ঋষিদের অন্তঃকরণে প্রবিষ্ট হয়েছে।
(অর্থাৎ,ঋষিরা মন্ত্রকে কান দিয়ে শুনেছেন।)

এই বাক বা বেদ মন্ত্রকেই ঋষিরা দর্শন ও শ্রবণ করেছিলেন।

    আমরা জানি, পদার্থ রূপান্তরিত হয় মাত্র কিন্তু ধ্বংস হয় না। ঠিক তেমনি, সূক্ষ্ম বেদ মন্ত্র থেকে যাবতীয় স্থূল পদার্থ উৎপন্ন হয়। মহাপ্রলয় আরম্ভ হলে,মন্ত্র পুনরায় সূক্ষ্ম অবস্থা প্রাপ্ত হয়।

 বেদ মন্ত্র থেকেই যে সমস্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়,এই বিষয়ে প্রমাণ:—

    ঋগভ্যো জাতাং সর্বশো মূর্তিমাহুঃ। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩.১২.৯.১ অর্থাৎ, এই ব্রহ্মাণ্ডে যত মূর্তিমান, আকার যুক্ত পদার্থ আছে, সবই ঋগরূপ ছন্দ-রশ্মি দ্বারা উৎপন্ন।

    অন্তরিক্ষং বৈ য়জুষামায়তনম্। গোপথ ব্রাহ্মণ,পূঃ ২.২৪ অর্থাৎ, যজু ছন্দ-রশ্মি দ্বারা অন্তরীক্ষের নির্মাণ হয়েছে। (অন্তরীক্ষ অর্থাৎ অসীম অনন্ত মহাকাশের যে ব্যাপ্তি বা স্পেস)

    সর্বা গতির্য়াজুষী হৈব শশ্বৎ। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩.১২.৯.১ অর্থাৎ ,সমস্ত গতি যজু ছন্দ-রশ্মি দ্বারা উৎপন্ন হয়। (নিরন্তর গতিযুক্ত পদার্থ অর্থাৎ পার্টিকেলের গতি, তারার গতি, গ্রহের গতি, উপ-গ্রহের গতি, সব গতি যজু ছন্দ-রশ্মি দ্বারা উৎপন্ন। )

    আদিত্যস্য অর্চিঃ সামানি শতপথ ব্রাহ্মণ ১০.৫.১.৫ অর্থাৎ, সামরশ্মি সূর্যের কিরণের ভিতর বিদ্যমান।

    সর্বং তেজঃ সামরূপ্যং হ শশ্বতঃ। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩.১২.৯.২ অর্থাৎ, ব্ৰহ্মান্ডে যত তেজ বা প্রকাশ(নক্ষত্র আদি) রয়েছে, তাতে সাম ছন্দ-রশ্মি বিদ্যমান।

    তাহলে প্রমাণিত হলো, বেদ মন্ত্র থেকে এই বিশাল মহাবিশ্বের যাবতীয় স্থূল পদার্থ উৎপন্ন হয়।

    বেদ মন্ত্রের সাহায্যে, আমাদের সৃষ্টি বিদ্যার জ্ঞান লাভ হয় কারণ ঈশ্বরকে জানতে হলে, ঈশ্বরের সৃষ্টিকে জানতে হবে তাছাড়াও, সাধারণ মানুষের জন্যও বেদ মন্ত্র থেকে ব্যাবহারিক বিদ্যা লাভ সম্ভব। যেমন,বেদ থেকে গণিত, আয়ুর্বেদ,গান, ছন্দ, ভাষা, জ্যোতির্বিদ্যা বা Astronomy আদি এসেছে।

    এটাই বেদের মহত্ত্ব যা গীতায় নেই বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের তথাকথিত ধর্ম গ্ৰন্থেও নেই কারণ বেদ মন্ত্রের তিন প্রকার ভাষ্য সম্ভব এবং একই মন্ত্র থেকে যেমন,সৃষ্টি বিজ্ঞানের জ্ঞান লাভ যায়, আবার সেই মন্ত্র থেকেই দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করাও সম্ভব।

তাই মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বলেছেন,বেদ হলো সত্য বিদ্যার পুস্তক।

    নাস্তিকেরাও স্বীকার করেন, বেদ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গ্ৰন্থ। এত ঐতিহ্য ও গৌরবের অধিকারী আমরা,অথচ বর্তমানে বেদরূপ হীরে ছেড়ে গীতা ও পুরাণরূপ কাঁচ সংগ্ৰহ করছি!!

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.