বেদ কবে আর কিভাবে প্রকট হইয়াছিল?

যদি ইহা স্বীকার করি যে বেদ নিত্য (অনাদি) আর  ইহাকে পরমাত্মাই প্রকট করিয়াছেন তো ইহার প্রকট হইবার কাল ঈশ্বরীয় জ্ঞানের গ্রন্থ অর্থাৎ বেদকেই স্বীকার করিতে হয়।

সেইরূপ যুক্তি তো এই হয় যে সময় যেখানে বেদের অত্যধিক আবশ্যকতা ছিল, সেই সময়ে সেখানে প্রকট হইয়া ছিল। এই পৃথিবীতে বেদজ্ঞান মানবের জন্য। মানব হইতে আলাদা নিম্ন প্রাণী ইহাকে না তো জানিতে পারে আর না তাহারা ইহা হইতে কোনও লাভ গ্রহণ করিতে পারে। অতঃ বেদ মানবের তখনই প্রাপ্ত হইয়াছিল যখন মানব এই সৃষ্টিতে উৎপন্ন হইয়াছিল। মানব এই সৃষ্টিতে কবে হইয়াছিল, ইহা জানিবার অপেক্ষা থেকে যায়।

বিকাসবাদকে সত্য সিদ্ধান্ত মান্যকারী তো ইহা মান্য করেন যে প্রারম্ভতে এক-কোষীয় জন্তুই সৃষ্টি ছিল আর লক্ষ্য-কোটি বর্ষে  সেই এক-কোষীয় জন্তু হইতে বর্তমান যুগে কোটি-কোটি জাতির জন্তু সৃষ্টি হইয়াছে। তাহারা ইহাও মান্য করেন যে সেই বিকাসের শৃংখলাতে মানব সব চাইতে উন্নত আর অন্তিম ছিল। আমরা বলিয়া থাকি যে বিকাসবাদ মিথ্যা বিচার। বিকাসবাদকে যদি সত্য মানি তো ইহাও মানতে হইবে যে বেদ উপদেশের কালে মানব আজ হইতে অবনত অবস্থাতে ছিল। পরন্তু মানবকে অন্য প্রাণী হইতে শ্রেষ্ঠতা ইহার বুদ্ধির জন্য আর বেদ এক মহান বিদ্বান আর জ্ঞানবান ব্যক্তির কথিত মান্য করিতে হইবে। ইহার মধ্যে বর্তমান যুগে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত হইতেও অধিক শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তের বর্ণন প্রাপ্ত হয়।

আমরা এক যজুর্বেদ ১.১ এর মন্ত্র দ্বারা ইহা স্বীকার করিতেছি যে অন্ন আর ঊর্জা সূর্য হইতে প্রাপ্ত হইয়াছে, হইতেছে আর হইতে থাকিবে। এই উভয়ের স্রোত সূর্যে র অতিরিক্ত অন্য কিছু নাই। এই বিষয়ে বর্তমান বিজ্ঞান ইহা হইতে অধিক জানিতে পারেননি। এক অন্য মন্ত্র দেখুন…….

ঋষি-দীর্ঘতমাঃ। দেবতা-অশ্বোগ্নিঃ। ছন্দঃ-ত্রিষ্টুপ্। স্বরঃ-ধৈবতঃ।

য়দক্রন্দঃ প্রথমং জায়মান উদ্যন্তসমুদ্রাদুত বা পুরীষাৎ।

শ্যেনেস্য পক্ষা হরিণস্য বাহূ উপস্তুত্য মহি জাতং তে অর্বন্।।

।। ঋ০ ১.১৬৩.১।।

    পদার্থঃ (শ্যেনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহূ) বাজ পাখার ন্যায় তথা হরিণের বাহুর সমান বন্ধনকারী। (অর্বন্) তীব্র গতি দ্বারা বিচরণকারী [পরমাত্মার তেজ]। (উদ্যন্ সমুদ্রাৎ) সমুদ্র (অন্তরিক্ষ) হইতে উপরে উঠিয়া। (য়ৎ অক্রন্দঃ) যে দীর্ঘ সময় ধরিয়া ঘোর শব্দ করিয়া (প্রথমম্ জায়মানঃ) প্রথমে উৎপন্ন হইয়া (উৎ বা পুরীষাৎ) অথবা সব কামনা পূর্ণকারীর (উপস্তুত্যম্) সমীপ (তে মহি জাতম্) সেই মহৎ উৎপন্ন হয়।

    এই মন্ত্রে সৃষ্টি-রচনার প্রারম্ভের বর্ণন। অশ্ব অগ্নিকে আমরা রচনার প্রারম্ভকারী মান্য করি। এই কারণকে অন্য বিদ্বানগণও এই প্রকার লইয়াছেন। উদাহরণের রূপে বৃহদারণ্যক উপনিষদে সৃষ্টি রচনার প্রসঙ্গে ইহা কহিয়াছেন…..

উষা বা অশ্বস্য মেধ্যস্য শিরঃ। সূর্য়শ্চক্ষুর্বাতঃ প্রাণোব্যাক্তমগ্নির্বৈশ্বানরঃ

সংবৎসর আত্মা অশ্বস্য মেধ্যস্য।। (বৃ০ উ০ ১.১.১)।

       পদার্থঃ (বৈ) নিশ্চয়, ইহাতে সন্দেহ নাই (মেধ্যস্য) যথার্থ প্রকার জানিবার যোগ্য (অশ্বস্য) সংসারের শির (উষাঃ) প্রাতঃকাল।

অর্থাৎ উষা (সৃষ্টি-প্রারম্ভে) যজ্ঞে অশ্বের শির (প্রথম চরণ)। যেখানে সৃষ্টি-রচনার উষা অর্থাৎ প্রারম্ভর কালের বর্ণন আর কহিয়াছেন যে রচনা-রূপী যজ্ঞের অশ্ব প্রথম পদ।

Share this post :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Create a new perspective on life

Your Ads Here (365 x 270 area)
Latest News
Categories

Subscribe our newsletter

Purus ut praesent facilisi dictumst sollicitudin cubilia ridiculus.