সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা কেমন ছিল? (পর্ব ১)
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-নিচৃৎ ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
নাসদাসীন্নো সদাসীত্তদানীম্ নাসীদ্রজো নো ব্যোমা পরো য়ৎ।
কিমাবরীবঃ কুহ কস্য শমন্ অম্ভঃ কিমাসীদ্ গহনম্ গভীরম্।। ১।।
পদার্থঃ—(তদানীম্) সৃষ্টির পূর্বে সেই সময় প্রলয় অবস্থাতে (অসৎ ন আসীৎ) শূন্য নিতান্ত অভাব ছিল না। (সৎ ন উ আসীৎ) সৎ-প্রকট রূপও কিছু ছিল না। (রজঃ ন আসীৎ) রঞ্জনাত্মক কণময় গগন-অন্তরিক্ষও ছিল না। (পরঃ ব্যোম ন উ) বিশ্বের পরবর্তী সীমারূপ বিশিষ্ট রক্ষক আবর্ত-ঘেরা খগোল আকাশও ছিল না। (কিম্ আবরীবঃ) আবরণীর অভাবে যথার্থ আবরকও কি হইতে পারে? ছিল না (কুহ কস্য শর্মন্) কি প্রকার? না কোথাও তথা প্রদেশ ছিল কাহার সুখ নিমিত্ত ছিল (গহনম্ গভীরম্ অম্ভঃ কিম্ আসীৎ) গূঢ় গম্ভীর সূক্ষ্ম জলও কি হইতে পারে অর্থাৎ ছিল না, যাহা হইতে ভোগ্য বস্তু উৎপন্ন হয়, যাহাতে সৃষ্টির বীজ ঈশ্বর প্রদান করেন।।১।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-নিচৃৎ ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্র্যা অহ্ল আসীৎ প্রকেতঃ।
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধান্যন্ন পরঃ কিঞ্চনাঽঽস।। ২।।
পদার্থঃ—(মৃত্যুঃ ন আসীৎ) সৃষ্টির পূর্বে না মৃত্যুও ছিল; তখন কি অমৃত ছিল? (তর্হি) সেই সময় মৃত্যু না থাকায় (অমৃতম্ ন) না অমৃত ছিল। (রাত্র্যাঃ অহ্নঃ) রাত আর দিনের (প্রকেতঃ) প্রজ্ঞান-পূর্বরূপ (ন আসীৎ) ছিল না। (তৎ একম্) তখন সেই এক তত্ত্ব (অবাতম্) বায়ুর অপেক্ষা হইতে রহিত (স্বধয়া) স্ব-ধারণশক্তি দ্বারা (আনীৎ) স্ব-সত্তা রূপে জাগ্রত ব্রহ্মতত্ত্ব ছিল। (তন্মাৎ অন্যৎ) তাহার ভিন্ন (কিম্-চন) কিছুই (পরঃ ন আস) তাহার অতিরিক্ত ছিল না।।২।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-নিচৃৎ ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
তম আসীত্তমসা গূঢ়হমগ্রেঽপ্রকেতং সলিলং সর্বমা ইদম্।
তুচ্ছ্যেনাভ্যপিহিতং য়দাসীত্তপসস্তন্মহিনাজয়তৈকম্।। ৩।।
পদার্থঃ—(অগ্রে) সৃষ্টির পূর্বে (তমসা) অন্ধকার দ্বারা (গূঢ়ম্) আবৃত (তমঃ আসীৎ) অন্ধকার রূপ ছিল (ইদং সর্বম্) এই সব সেই সময় (সলিলম্ আঃ) বিস্তার জল যেরূপ (অপ্রতম্) অবিজ্ঞেয়-না জানিবার যোগ্য ছিল। (তুচ্ছ্যেন) তুচ্ছভাব দ্বারা (য়ৎ অপিহিতম্) আবৃত ঢাকা (আভু) আভু নামে অব্যক্ত উপাদান কারণ (আসীৎ) ছিল যাহা হইতে এই সৃষ্টি আভূত-আবিভূত হইয়াছে (তপসঃ) পরমাত্মার জ্ঞানময় তপ দ্বারা (তৎ মহিনা) মহত্তত্ব এক রূপ উৎপন্ন হইয়াছিল।।৩।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
কামস্তদগ্রে সমবর্ততাধি মনসো রেতঃ প্রথমং য়দাসীৎ।
সতো বন্ধুমসতি নিরবিন্দন্হৃদি প্রতীষ্যা কবয়ো মনীষা।। ৪।।
পদার্থঃ–(অগ্রে কামঃ) আরম্ভ সৃষ্টিতে কাম অর্থাৎ অভিলাষ-ইচ্ছাভাব (তৎ য়ৎ) সেই যে (মনসঃ অধি) মনের অন্তর (সমবর্তত) বর্তমান হইয়া থাকে (প্রথমং রেতঃ) প্রথম প্রাণীর বীজ (আসীৎ) থাকে (সতঃ) শরীরের নিমিত্ত (বন্ধুম্) বদ্ধনকারী সেই রেত-মানব বীজ শক্তিকে (মনীষা) বিবেচনশীল বুদ্ধি দ্বারা (প্রতীষ্য) প্রতীত করিয়া নিশ্চিত করিয়া (হৃদি) হৃদয়ে (নিঃ অবিন্দন্) নির্বিন্ন হইয়া যায় বৈরাগ্যকে প্রাপ্ত হইয়া যায়।। ৪।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
তিরশ্চীনো বিততো রশ্মিরেষামধঃ স্বিদাসী৩দুপরি স্বিদাসী৩ৎ।
রেতোধা আসন্মহিমান আসন্তস্বধা অবস্তাৎপ্রয়তিঃ পরস্তাৎ।। ৫।।
পদার্থঃ—(রেতোধা:) পাণী সৃষ্টির পুর্বে শরীরের বীজশক্তি কামভাব রেত নাম দ্বারা কথিত সেই রেত অর্থাৎ মানব বীজ শক্তির ধারণকারী আত্মা (আসন্) ছিল (মহিমানঃ আসন্) তাঁহারা মহান অর্থাৎ অসংখ্য ছিল (এষাং রশ্মিঃ) ইহাদের বন্ধন দোড়ী বা লাগাম পূর্বজন্মে কৃত কর্মের সংস্কার (তিরশ্চীনঃ বিততঃ) সেই সংস্কার বিস্তৃত বিস্তার যাহা (অধঃ স্বিৎ আসীৎ) নিকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দানের হেতু তথা (উপরিস্বিৎ আসীৎ) উৎকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দানের হেতু হয় (অবস্তাৎ স্বধা) শরীরের নতুন ভাগে স্বধারণা জন্ম গ্রহণ করা (পরস্তাৎ প্রয়তিঃ) আর শরীরের পরের ভাগে মৃত্যু হয়।। ৫।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
কো অদ্ধা বেদ ক ইহ প্র বোচৎকুত আজাতা কুত ইয়ং বিসৃষ্টিঃ।
অর্বাগে¦বা অস্য বিসর্জনেনাথা কো বেদ য়ত আবভূব।। ৬।।
পদার্থঃ—(কঃ) কে (অদ্ধা) তত্ত্ব দ্বারা যথার্থ (বেদ) জানেন (কঃ) কে (ইহ) এই বিষয়ে (প্রবোচৎ) প্রবচন করিতে পারেন (ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (কৃতঃ) কি নিমিত্ত কারণ দ্বারা (কুতঃ আজাতা) কি উপাদান দ্বারা প্রকট বা উৎপন্ন হইয়াছে (অস্য বিসর্জনেন) ইহার সমাপ্তি দ্বারা উৎপাদন দ্বারা (অর্বাক্ দেবাঃ) পশ্চাৎ উৎপন্ন বিদ্বান (অথ কঃ) পুনঃ কে (বেদ) জানেন (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান দ্বারা এই আবির্ভূত বা উৎপন্ন হইয়াছে।। ৬।।
ঋষিঃ-প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী।। দেবতা-ভাববৃত্তম্।। ছন্দঃ-পাদনিচৃৎ ত্রিষ্টুপ্।। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
মূল তত্ত্ব কো জানেন বালা একমাত্র পরমেশ্বর ইয়ং বিসৃষ্টির্য়ত আবভূব য়দি বা দধে য়দি বা ন।
য়ো অস্যাধ্যক্ষঃ পরমে ব্যোমনৎসো অঙ্গ বেদ য়দি বা ন বেদ।। ৭।।
পদার্থঃ—(ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান দ্বারা উৎপন্ন হইয়াছে (অস্য য়ঃ অধ্যক্ষঃ) এই উপাদানের যিনি অধ্যক্ষ (পরমে ব্যোমন্) মহান আকাশে বর্তমান, (অঙ্গ) হে জিজ্ঞাসু! (সঃ) সেই পরমাত্মা (য়দি বা দধে) যদি ইচ্ছা করেন সৃষ্টিকে ধারণ করেন-সৃষ্টি রূপে স্থির রাখেন (য়দি বা ন) আর যদি ইচ্ছা করেন ধারণ করেন না অর্থাৎ সংহার করেন, (য়দি বেদ) যদি উপাদান কারণকে জানিয়া নিজে বিজ্ঞানে লক্ষিত করে সৃষ্টিরূপে পরিণত করেন, (য়দি বা ন বেদ) যদি না জানিয়া স্বজ্ঞানে লক্ষিত না করে সৃষ্টি রূপে পরিণত করেন না, এই প্রকার সৃষ্টি আর প্রলয় সেই পরমাত্মার অধীন।। ৭।।
চলিবে…………